১১:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বেতন বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রম কারখানা ছুটি ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৫৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

১৫% বেতন বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষ, ২৫ কারখানা ছুটি ঘোষণা

বেতন বাড়ানো ছাড়া তাদের আরও ছয়টি দাবির কথা জানান শ্রমিকরা

গণরায় ডেস্ক:

বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ২৫টির মত তৈরি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকাসহ এর আশপাশের এলাকার এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন।

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বার্ষিক বেতন-ভাতা বাড়ানো, অর্জিত ছুটির বকেয়া টাকা প্রতিমাসে পরিশোধসহ ৭ দফা দাবি জানিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কর্মবিরতি পালন করে আসছিল।

সোমবার পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে।

সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, চলতি ডিসেম্বর থেকে ৯ শতাংশ হারে মজুরি বাড়বে, যা জানুয়ারি মাসে পাবেন শ্রমিকরা। বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সবশেষ সংশোধিত শ্রম আইন অনুযায়ী অন্য সুবিধাও মিলবে।

তবে সরকারের ৯ শতাংশ বেতন বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন আশুলিয়ার বেশ কিছু কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা।

ওমর ফারুক নামে এক শ্রমিক বলেন, “আমাদের এত অল্প বেতনে হয় না, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাই বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আমরা দাবি করছি। এ ছাড়া বেতন প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে দিতে হবে।”

আশুলিয়ায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, নতুন বছরের জন্য সরকার ৪ শতাংশ ‘ইনক্রিমেন্টের’ ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাদের দাবি ১৫ শতাংশ। এছাড়া আরও ছয়টি দাবি রয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে- ২০২৪ সালের অর্জিত ছুটির টাকা ডিসেম্বরের মধ্যেই পরিশোধ ও যোগদানের তারিখ থেকে ওই ছুটির টাকা দেওয়া। তিনদিন ছুটি পাশ করলে হাজিরা বোনাস দেওয়া ও মেডিকেল ছুটি দিলে কোনো রকম হাজিরা বোনাস না কাটা; ১০০ শতাংশ গ্রেড দেওয়া। রমজান মাসে কোনো ‘জেনারেল ডিউটি’ না করানো। রমজানে ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করালে ইফতারির জন্য ১২০ টাকা করে দেওয়া; আন্দোলনরত কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা যাবে না; আন্দোলনকারী বা অন্য কোনো শ্রমিক স্ব ইচ্ছায় চলে গেলে সেই শ্রমিকের ফিঙ্গার ব্লক বা ক্রোস চিহ্ন দেওয়া যাবে না। শ্রমিকরা চাকরি ছেড়ে নিলে শেষ কর্মদিবসে তার সব পাওনা নগদ দিয়ে দেওয়া।

মাইনুল ইসলাম নামে আন্দোলনকারী আরেক শ্রমিক বলেন, “দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বেতন সামঞ্জস্য না থাকায় বার্ষিক বেতন-ভাতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই ১৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে।”

বুধবার বিকালে শিল্প পুলিশের সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কয়েকটি পোশাক কারখানা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে অন্য শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

নরসিংহপুর এলাকার হামীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার অ্যাপারেলস, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলিম, সেতারা গ্রুপসহ অন্তত ২৫টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, “দুএকটি গার্মেন্টসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ছাড়া বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত শিল্প পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। যৌথবাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বেতন বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রম কারখানা ছুটি ঘোষণা

আপডেট সময় ০১:৫৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

১৫% বেতন বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষ, ২৫ কারখানা ছুটি ঘোষণা

বেতন বাড়ানো ছাড়া তাদের আরও ছয়টি দাবির কথা জানান শ্রমিকরা

গণরায় ডেস্ক:

বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ২৫টির মত তৈরি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকাসহ এর আশপাশের এলাকার এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন।

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বার্ষিক বেতন-ভাতা বাড়ানো, অর্জিত ছুটির বকেয়া টাকা প্রতিমাসে পরিশোধসহ ৭ দফা দাবি জানিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কর্মবিরতি পালন করে আসছিল।

সোমবার পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে।

সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, চলতি ডিসেম্বর থেকে ৯ শতাংশ হারে মজুরি বাড়বে, যা জানুয়ারি মাসে পাবেন শ্রমিকরা। বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সবশেষ সংশোধিত শ্রম আইন অনুযায়ী অন্য সুবিধাও মিলবে।

তবে সরকারের ৯ শতাংশ বেতন বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন আশুলিয়ার বেশ কিছু কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা।

ওমর ফারুক নামে এক শ্রমিক বলেন, “আমাদের এত অল্প বেতনে হয় না, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাই বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আমরা দাবি করছি। এ ছাড়া বেতন প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে দিতে হবে।”

আশুলিয়ায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, নতুন বছরের জন্য সরকার ৪ শতাংশ ‘ইনক্রিমেন্টের’ ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাদের দাবি ১৫ শতাংশ। এছাড়া আরও ছয়টি দাবি রয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে- ২০২৪ সালের অর্জিত ছুটির টাকা ডিসেম্বরের মধ্যেই পরিশোধ ও যোগদানের তারিখ থেকে ওই ছুটির টাকা দেওয়া। তিনদিন ছুটি পাশ করলে হাজিরা বোনাস দেওয়া ও মেডিকেল ছুটি দিলে কোনো রকম হাজিরা বোনাস না কাটা; ১০০ শতাংশ গ্রেড দেওয়া। রমজান মাসে কোনো ‘জেনারেল ডিউটি’ না করানো। রমজানে ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করালে ইফতারির জন্য ১২০ টাকা করে দেওয়া; আন্দোলনরত কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা যাবে না; আন্দোলনকারী বা অন্য কোনো শ্রমিক স্ব ইচ্ছায় চলে গেলে সেই শ্রমিকের ফিঙ্গার ব্লক বা ক্রোস চিহ্ন দেওয়া যাবে না। শ্রমিকরা চাকরি ছেড়ে নিলে শেষ কর্মদিবসে তার সব পাওনা নগদ দিয়ে দেওয়া।

মাইনুল ইসলাম নামে আন্দোলনকারী আরেক শ্রমিক বলেন, “দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বেতন সামঞ্জস্য না থাকায় বার্ষিক বেতন-ভাতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই ১৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে।”

বুধবার বিকালে শিল্প পুলিশের সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কয়েকটি পোশাক কারখানা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে অন্য শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

নরসিংহপুর এলাকার হামীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার অ্যাপারেলস, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলিম, সেতারা গ্রুপসহ অন্তত ২৫টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, “দুএকটি গার্মেন্টসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ছাড়া বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত শিল্প পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। যৌথবাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”